Header Ads

আমরা কবে মুক্তি পাব?

Freedom- Sabuj Bangla
 সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিট মিরপুর-২ থেকে ছাত্রীকে পড়িয়ে বের হয়েছি । বাইরে শীত পড়েছে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এই শীতটা ছিল না বলেই শীতের কাপড় নিয়ে বের হইনি । কিন্তু এখন বেশ শীত লাগছে । এক কাপ চা খাওয়া দরকার পরিচিত এক দোকানে গেলাম চা খাব বলে । এই সময় এক বড় ভাই ও ঐ একই দোকানে চা খাচ্ছেন আমি মামা এক কাপ রং চা চিনি কম বলে সেই বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি । সেই বড় ভাই একবার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর একবার তার হাতের জ্বলন্ত সিগারেটে টান দিচ্ছেন এমন সময় ৪০-৫০ বছর বয়সি এক জন লোক “ভাই একটা স্টার সিগারেট দেনতো” দোকানদার হাত বারিয়ে সিগারেট দিলেন, দোকানে ঝুলানো লাইটার দিয়ে সিগারেট ধড়িয়ে আমাকে বললেন “বাবা একটু চেপে বস তো আমি একটু বসবো” ।এর মধ্যে আমার চা পেয়ে গেছি চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি আর সেই বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি । এমন সময় খেয়েল করলাম আমার পাশে বসা সেই লোকটি সিগারটে  টান দিচ্ছেন আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি  তাকে জিজ্ঞাস  করলাম চাচা কাঁদেন কেন জিজ্ঞাস করার সাথে সাথে আরও জোরে কাঁদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন আমি মাটি কাটার কাজ করি যখন কাজ থাকে না তখন লেগুনায় হেল্পারি করি । আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি কাজের জন্য কিন্ত কোন কাজ পাইনি গাড়ির গ্যারেজে গেলাম তারা বলল তারা গাড়ি বের করবে না । আমার  বড় মেয়েটা গারমেন্সে কাম করে । মাইয়া আর আমার টাকা দিয়া সংসার চলে মাইঝা মাইয়াটা ক্লাস সেভেন থাইকা ক্লাস এইটে ভর্তি হইব , আর ছোট পোলা এইবার স্কুলে ভর্তি করানোর কথা । সেই বড় ভাই বললেন ভালোতো এইটার সাথে আপনার কাঁদার কি সম্পর্ক “বাজান গত দুই খান মাস হইলো আমার কামাই রোজগার নাই। দুই মাসে মাত্র ৬দিন কাম করছি এক দিন কাম করল তিনশ টাকা পাই যেদিনের টাকা সেইদিনেই শেষ মেয়ের বেতনের টাকা দিয়া  বাসা ভাড়া আর মেঝো মেয়ের পড়া লেখার খরচ চলে কিন্তু গত দুই মাস আমার কাম না থাকায় সংসার চলে না আর তিন দিন পর মেয়েটার স্কুলে টাকা লাগবো আবার ছোট ছেলেটারে মনে হয় এই বছর স্কুলে ভর্তি করাইতে পারমু না মেয়ে টারও মনে হয় আর স্কুল যাওয়া হইব না। চোখের পানি মুছতে মুছতে পকেট এ হাত দিলেন একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে সিগারেটের দাম দিলেন। এর মাঝে চায়ের কাপে ২/৩ বার চুমুক দিয়েছি কেন জানি চা খেতে ভালো লাগতাছিল না চা এর কাপটা টুলের ওপর রেখে লোকটার চলে যাওয়া দেখতাছিলাম।  নিজেকে অসহায় লাগতাছে, প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করিছ চায়ের দাম দিব সেই বড় ভাই একটা ঝারি দিল  এই রাখো আমি দিচ্ছি তিনিই চায়ের দাম দিলেন এবং আমাকে বোলতে লাগলেন বুঝছো ভাইয়া আমি প্রথমে ভাবছিলাম ধন্দাবাজ একটু পর মেয়ের কথা বলে সাহয্য চাইবেন  কিন্ত এখন নিজেকে অনেক ছোট মনের মনে  হচ্ছে ।  তাকে শুধু একটা কথা বললাম ভাই এইটা আপনার দোষ না আমাদের আশেপাশে এই রকম ঘটনা প্রায় দেখা যায় । তাকে একটা প্রশ্ন করলাম ভাইয়া আপনিতো সাংবাদিকতা করেন অনেক মানুষের সাথে কথা বলেন সাধারন মানুষ অসাধারন মানুষ । আমরা কবে মুক্তি পাব? বলে আপনার মনে হয় আর কবে আমরা টানা ১০ থেকে ১৫ বছর কোন বিশৃংখলা ছাড়া নিরস্বার্থ ভাবে দেশের মানুষের উন্নায়নে কাজ করতে পারব । তিনি মুচকি হেসে আমার ঘাড়ে হাত রাখলেন আর বললেন বাসায় যাও বাইরে বেশি ঘুরাঘুরি কইরো না । তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিরপুর-১ এর দিকে হাটা শুরু করলাম  ।

সামসুজ্জোহা সবুজ 
৩১/১২/২০১৩  
Powered by Blogger.